অনুসরন করুন


Blogger widgets
IconIcon Icon

vvvv

Home » , , » ইতিহাসখ্যাত 'ভাওয়াল পরগণা'।

ইতিহাসখ্যাত 'ভাওয়াল পরগণা'।

গাজীপুর জেলা শহর থেকে মাত্র এক কিলোমিটার উত্তর-পূর্ব দিকে এগোলেই চিলাই নদীবর্তমানে মৃতপ্রায় এই নদীটির নাম অনেকেরই অজানাঅথচ নদীটিকে কেন্দ্র করেই গড়ে ওঠে এক সময়ের ইতিহাসখ্যাত 'ভাওয়াল পরগণা'
সে পরগণাটিই এখন গাজীপুর জেলা
আর জেলা হিসেবে এর যাত্রা শুরু ১৯৮৪ সালের মার্চ
চিলাই নদীর পাড়ে ভাওয়াল রাজাদের নির্মিত বিভিন্ন স্থাপনা, বিশেষ করে শ্মশানবাড়ির স্থাপত্য দেখে মুহুর্তের জন্য হলেও মন হারিয়ে যায় ভিন্ন এক আবেশে

এলাকাটি 'শ্মশানঘাট' হিসেবে অধিক পরিচিতশ্মশান বলতে যে ভীতিজনক পরিবেশ বুঝায় এটি কিন্তু তেমন নয়মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে শ্মশানবাড়িটি অবস্থিত
ভাওয়াল রাজাদের আমলে নির্মিত বেশ কিছু বিখ্যাত দৃষ্টিনন্দন নিদর্শন এখনো কালের গ্রাসকে উপেক্ষা করে কোনরকমে টিকে রয়েছেএগুলোর মধ্যে ভাওয়াল রাজ শ্মশানবাড়ি অন্যতম
শ্মশানবাড়িতে রয়েছে সুদৃশ্য কারুকার্যমন্ডিত সুউচ্চ একটি এবং পাশাপাশি আরো কয়েকটি মিনার বা স্মৃতিস্তম্ভবহুদূর থেকেও স্তম্ভটি চোখে পড়ে
বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, ভাওয়াল পরগণার কেন্দ্র বিন্দু ছিল জয়দেবপুরবর্তমানে যেটি গাজীপুর জেলা সদর
এক সময় এলাকাটির শাসন ক্ষমতায় ছিল প্রতাপশালী গাজী বংশ শাসকগণযাদের একজন ফজল গাজী ছিলেন বাংলার বার ভূঁইয়াদের মধ্যে অন্যতম বংশের সর্বশেষ শাসক ছিলেন দৌলত গাজী
এরপর খ্রীস্টীয় অষ্টাদশ শতাব্দীর তৃতীয় দশকে-১৭৩৮ খ্রীস্টাব্দে ভাওয়াল রাজাদের রাজত্বের সূচনা ঘটেশাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন রায় চৌধুরী বংশের বলরাম রায়বলরাম রায়ের উত্তরপুরুষ জয়দেব নারায়ণ তার নিজের নামানুসারে এলাকার নাম রাখেন জয়দেবপুর
ভাওয়াল রাজারা প্রায় দু' বছর ভাওয়াল পরগণা শাসন করেন
ভাওয়াল রাজাদের শাসন আমলে কারুকার্যময় দৃষ্টিনন্দন এই শ্মশান বাড়িটি নির্মিত হয়েছেতবে ঠিক কবে থেকে শ্মশানবাড়িটির নির্মাণ কাজ শুরু, আর কয় পুরুষের স্মৃতিস্তম্ভ এখানে রয়েছে তার সঠিক কোন তথ্য পাওয়া যায়নি
শ্মশানের স্মৃতিস্তম্ভগুলোর পূর্ণাঙ্গ রূপ দেয়া হয় ভাওয়াল রাজবংশের সবচেয়ে খ্যাতিমান শাসক রাজা কালী নারায়ণ রায় চৌধুরীর আমলেএই রাজার জন্ম ১২১৫ বঙ্গাব্দের ২৫ শ্রাবণ, আর মৃত্যু ১২৮৩ বঙ্গাব্দের আষাঢ়
জানা গেছে, শ্মশানটি ছিল শুধু ভাওয়ালের রাজ পরিবারের পারিবারিক শ্মশানরাজবংশের মৃতব্যক্তিদের দেহই এখানে সৎকার করা হতো
অপরূপ কারুকার্যখচিত স্মৃতিস্তম্ভগুলো কলকাতা থেকে কারিগর এনে নির্মাণ করা হয়েছে বলে জনশ্রুতি আছে
অনুমান করা হয়- রায় চৌধুরী বংশের পত্তনের পরপর শ্মশানের স্থানটি নির্বাচন করা হয়কোন রাজপুরুষের মৃতদেহ দাহ করার স্থানের উপর প্রথমে একটি ঘর তৈরি করে তার উপর স্মৃতিস্তম্ভগুলো নির্মাণ করা হয়েছেশ্মশান বাড়ির সাতটি স্মৃতিস্তম্ভ ওই রাজবংশের সাতজনের স্মৃতি ধারণ করে আছে
কথিত আছে, স্মৃতিস্তম্ভগুলোর চূড়া মূল্যবান ধাতু দ্বারা আবৃত ছিল- কিন্তু সেগুলো এখন আর নেইফলকগুলো খসে পড়েছে- অনেকে সেগুলো চুরি করে নিয়ে গেছেশ্মশানবাড়িতে বেশ কয়েকটি বড় বড় দামী পাথরের শিবলিঙ্গ ছিল, সেগুলো বেহাত হয়ে গেছেঅনেকস্থানে দেয়ালের ইট প্লাস্টার ইতোমধ্যে খসে পড়েছেরক্ষণাবেক্ষণের অভাবে শ্মশানবাড়িটি ধীরে ধীরে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে
এদিকে ভাওয়াল রাজবংশের বড় কুমার বলে পরিচিত ছিলেন রণেন্দ্র নারায়ণ রায়১৯১০ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেনতার পত্নী সরযু বালা দেবী শ্মশানবাড়ির একেবারে পশ্চিমপাশে রণেন্দ্র নারায়ণের স্মৃতি রকষার্থে একটি মন্দির নির্মাণ করেনএটিও মূল্যবান শ্বেত পাথরে নির্মিত এবং দেখতে অত্যন্ত সুদৃশ্যস্থানীয় হিন্দুধর্মাবলম্বীরা মন্দিরটি সংস্কার করে পূজা অর্চনা করে যাচ্ছেন


Share this article :

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
সম্পাদক: টিটু ইফতেখার
কপিরাইট © 2011. বাংলাদেশের প্রাকৃতিক ও ঐতিহাসিক নিদর্শন - সর্বসত্ব সংরক্ষিত
টেমপ্লেট সম্পাদনা - আলভী ডিজাইন