হাকালুকি হাওড় বাংলাদেশের একটি অন্যতম বৃহৎ মিঠা পানির জলাভূমি। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় হাওর
হলো হাকালুকি হাওর। এই হাওর সিলেট ও মৌলভীবাজার জেলায় অবস্থিত। ছোট বড় প্রায় ২৩৮টির বেশী বিল ও ১০টি নদী নিয়ে গঠিত হাকালুকি হাওর বর্ষাকালে প্রায় ১৮ হাজার হেক্টর এলাকায় পরিণত হয়। শুধুমাত্র বিলের আয়তন ৪,৪০০ হেক্টর।
ভূতাত্ত্বিকভাবে এর অবস্থান, উত্তরে ভারতের মেঘালয় পাহাড় এবং পূর্বে ত্রিপুরা পাহাড়ের পশ্চিমে ভাটেরা পাহাড় ও পূর্বে পাথারিয়া মাধব পাহাড়বেষ্টিত হাকালুকি হাওড়। হাকালুকি হাওড় পরিবেশবান্ধব পর্যটন উন্নয়নের জন্য একটি সম্ভাবনাময়ক্ষেত্র। এই হাওড় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপূর্ব লীলাভূমি। হাকালুকি হাওড় বছরের বিভিন্ন সময় ভিন্ন ভিন্ন রূপ ধারণ করে।
শীত মৌসুমে হাওড়ের দিগন্ত বিস্তৃত প্রাকৃতিক দৃশ্য সত্যিই দৃষ্টিনন্দন। বিলের জলের মাঝে ও চারিধারে জেগে থাকা সবুজ ঘাসের গালিচায় মোড়া কিঞ্চিৎ উঁচুভূমি বিলের জলে প্রতিচ্ছবি ফেলে সৃষ্টি করে অপরূপ দৃশ্য। শীতকালে হাওড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যকে সমৃদ্ধ করে বিভিন্ন ধরণের অতিথি পাখির আগমন ও কলরব। পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চল থেকে অতিথি পাখিরা আসে এই হাকালুকি হাওরে খাদ্য ও আবাসস্থলের সন্ধানে। হাকালুকি হাওড় পরিণত হয় দেশীয় ও অতিথি পাখির মিলন কেন্দ্রে। বর্ষাকালে হাকালুকি হাওড়ের ২৩৮টি বিল ও ১০টি নদী একিভূত হয়ে রুপ ধারণ করে সাগরের ন্যায় এক বিশাল জলাশয়ের। এ সময় হাকালুকি হাওড়ের বিলের পাড় ও কান্দায় বিদ্যমান জলাভূমিবন পানির নিচে ডুবে গিয়ে সৃষ্টি করে ডুবন্ত বন যা ব্যবহৃত হয় মাছের আশ্রয়স্থল হিসাবে। বর্ষাকালে হাকালুকি হাওড় পাড়ে বসবাসরত মানুষের মাঝে সৃষ্টি হয় এক অন্যরকম উন্মাদনা। যোগাযোগ ব্যবস্থায় বাহন হিসাবে স্থান করে নেয় দেশীয় দাড়বাহী ও ইঞ্জিন চালিত নৌকা। জেলেরা মেতে ওঠে মাছ ধরার উৎসবে। হাকালুকি হাওড়ের জীববৈচিত্র্যের ভাণ্ডারও অত্যন্ত সমৃদ্ধ। বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদ ও প্রাণী পাওয়া যায় এই হাওড়ে। হাওরে ৫২৬ প্রজাতির উদ্ভিদ,
১১২ প্রজাতির অতিথি পাখি ও ৩০৫ প্রজাতির দেশীয় পাখি, ১৪১ প্রজাতির বন্যপ্রাণী ও ১০৭ প্রজাতির মাছ দেখা যায়। ভূতাত্ত্বিকভাবে এর অবস্থান, উত্তরে ভারতের মেঘালয় পাহাড় এবং পূর্বে ত্রিপুরা পাহাড়ের পশ্চিমে ভাটেরা পাহাড় ও পূর্বে পাথারিয়া মাধব পাহাড়বেষ্টিত হাকালুকি হাওড়। হাকালুকি হাওড় পরিবেশবান্ধব পর্যটন উন্নয়নের জন্য একটি সম্ভাবনাময়ক্ষেত্র। এই হাওড় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপূর্ব লীলাভূমি। হাকালুকি হাওড় বছরের বিভিন্ন সময় ভিন্ন ভিন্ন রূপ ধারণ করে।
কারো মতে,
বহু বছর আগে ত্রিপুরার মহারাজা ওমর মানিক্যের সেনাবাহিনীর ভয়ে বড়লেখার কুকি সম্প্রদায়ের দলপতি হাঙ্গর সিং এই অঞ্চলের কাদাযুক্ত জঙ্গলপূর্ণ বিস্তীর্ণ এলাকায় লুকিয়ে পড়ে। কালক্রমে ওই এলাকার নাম হয় ‘হাঙ্গর লুকি’, এরপর
ধীরে ধীরে তা থেকে ‘হাকালুকি’ নামে পরিচিত হয়। আবার কারো কারো মতে,
প্রায় দুই হাজার বছর আগে প্রচণ্ড এক ভূমিকম্পে ‘আকা’ নামে
এক রাজা ও তাঁর রাজত্ব মাটির নিচে সম্পূর্ণ তলিয়ে যায়। কালক্রমে এই তলিয়ে যাওয়া নিম্নভূমির নাম হয় ‘আকালুকি’ এবং সেখান থেকে হাকালুকি। কেউ কেউ বলে থাকেন,
একসময় বড়লেখা থানার পশ্চিমাংশে ‘হেংকেল’ নামে একটি জাতি বাস করত। পরবর্তী সময়ে এই ‘হেংকেলুকি’ থেকেই হাকালুকি নাম ধারণ করে। এই হাকালুকি হাওরটিতে দুই শর বেশি বিল রয়েছে।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন