নাটোর জেলা শহরের বঙ্গজ্জল এলাকায় রয়েছে রানী ভবানী রাজপ্রাসাদ। তোরণ পেরিয়ে ভেতরে ঢুকলে চোখে পড়বে রাজবাড়ির কামান। রাজবাড়িটির ভেতরে রয়েছে ৬টি দিঘি। আর পুরো রাজবাড়িটি বাইরের দিক থেকে লেক আকৃতির দিঘি দিয়ে ঘেরা। ভেতরে রয়েছে বড় তরফ ভবন নামে পরিচিত রানী ভবানীর রাজপ্রাসাদ। সপ্তদশ শতাব্দিতে নির্মিত সুরম্য এ ভবনটি আজও সবার দৃষ্টি কাড়তে সক্ষম। জানা যায়,
রাজা রামজীবন ১৭০৬-১৭১০ সালের কোনো এক সময় পুঠিয়ার রাজার নিকট থেকে প্রায় ১৮০ বিঘার একটি বিল দান হিসেবে গ্রহণ করে সেখানে এই রাজপ্রাসাদ গড়ে তোলেন।
রাজবাড়ি
নির্মাণ করার পর রাজ-আমলা, কর্মচারী বহুবিধ লোকের সমাগমে অল্পদিনের মধ্যে বিলটি একটি শহরে পরিণত হয়। সেই পরিণত শহরই নাটোর। রাজা রামজীবনের একমাত্র ছেলে কলিকা প্রসাদ মারা গেলে তার দত্তক ছেলের সঙ্গে রানী ভবানীর বিয়ে দেন।
৪৯.১৯২৫ একর জমির ওপর নাটোর রাজবাড়ী নির্মিত হয়েছিল। রাজা রামজীবন নাটোর রাজবাড়ীর প্রথম রাজা হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন ১৭০৬ মতান্তরে ১৭১০ খ্রিস্টাব্দে। তিনি ১৭৩০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেন এবং সে বছরেই মৃত্যুবরণ করেন। রাজা রামজীবনের মৃত্যুর পর রামকান্ত ১৭৩৪ খ্রিস্টাব্দে নাটোরের রাজা হন। রাজা রামকান্ত তার মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত অর্থাৎ ১৭৪৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত নাটোরের রাজত্ব করেন। রামকান্তের মৃত্যুর পর রানী ভবানী স্বহস্তে রাজ্যভার গ্রহণ করেন। তাঁর রাজ্য ছিল রাজশাহী, পাবনা, দিনাজপুর, বগুড়া, কুষ্টিয়া,
রংপুর, মুর্শিদাবাদ, বীরভূম, মালদগ জেলাব্যাপী। একদা সমগ্র বাংলার মধ্যে একমাত্র রানী ভবানীর রাজত্বই ছিল বর্গীর হামলামুক্ত ও নিরাপদ। তিনি প্রাসাদ রক্ষার জন্য সেনাবাহিনী মোতায়েন করেন।
রানী ভবানী জনসাধারণের কল্যাণে অকাতরে দান করেছেন। এজন্য তাকে দানশীলও বলা হয়ে থাকে। ছিয়াত্তরের মন্বন্তরের কথা কিংবদন্তি হয়ে আছে। অসংখ্য মানুষ দুর্ভিক্ষে মারা যায় ঐ সময়। দুর্ভিক্ষে প্রজাদেরকে বাঁচানোর জন্য তিনি আপ্রাণ চেষ্টা করেন।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন