রবীন্দ্র স্মৃতি বিজড়িত শিলাইদহের কুঠিবাড়ী।
কুষ্টিয়া শহর থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে রবীন্দ্রনাথের স্মৃতি বিজড়িত সবুজ-শ্যামল ছায়া সুশীতল একটি গ্রাম। ঠাকুর পরিবারের এ বাড়িটি সবার কাছে শিলাইদহের কুঠিবাড়ী নামেই পরিচিত। রবীন্দ্রনাথ শিলাইদহে এসেছিলেন প্রথমে জমিদারি দেখাশোনা করার কাজে। জমিদার রবীন্দ্রনাথ মিশে গিয়েছিলেন শিলাইদহের প্রতিটি মানুষের সুখ-দুঃখের সঙ্গে। শুধু জমিদারিই নয়, এই শিলাইদহ ছিল রবিঠাকুরের সাহিত্যসৃষ্টির এক অপূর্ব প্রেরণা। এখানে তিনি রচনা করেন মানসী, সোনার তরী, চিত্রা, বলাকা, ক্ষণিকা, নৈবদ্য প্রভৃতি। তার অনবদ্য সৃষ্টি গল্পগুচ্ছের অধিকাংশ গল্প রচিত হয়েছিল এখানেই। এমনকি গীতাঞ্জলির অধিকাংশ কবিতাও। প্রকৃতপক্ষে রবীন্দ্রনাথকে শিলাইদহ কতখানি সমৃদ্ধ করেছিল তার লেখাতেই প্রমাণ পাওয়া যায়। হয়তো শিলাইদহের অকৃত্রিমতাই মুগ্ধ হয়ে কবি গেয়ে উঠেছিলেন আকাশ ভরা সূর্যতারা/বিশ্ব ভরা প্রাণ/তাহারি মাঝখানে, আমি পেয়েছি মোর স্থান/বিস্ময়ে তাই জাগে আমার গান। রবীন্দ্রনাথ তার জীবদ্দশাতে ১৩৪৬ সালের ১ চৈত্র শিলাইদহ পল্লী সাহিত্য সম্মেলনে সম্পাদককে লিখেছিলেন আমার যৌবন ও প্রৌঢ় বয়সের সাহিত্যরস সাধনার তীর্থস্থান ছিল পদ্মা প্রবাহ চুম্বিত শিলাইদহের পল্লীতে। শিল্প-সাহিত্য ও সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে এখানে সে সময় আবির্ভাব ঘটেছিল বড় বড় প্রভাবশালী মহৎ সব ব্যক্তিত্বের। এক সময়ের কোলাহলপূর্ণ সেই বাড়ি এখন এক স্মৃতিচিহ্ন জাদুঘর।পুরো বাড়িটা আমবাগানে ঘেরা। বাড়ির চারপাশে ঢেউ খেলানো দেয়াল, যেন পদ্মারই ঢেউ। পাশে বকুল তলার শান বাঁধানো পুকুর ঘাট, জায়গাটা এখনও কোলাহলপূর্ণ। বাড়ির সামনে শান বাঁধানো উন্মুক্ত বৈঠকখানায় প্রজারা এসে বসত সেই সময়। বাড়ির পেছনে টেনিস কোর্ট। বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করলে চোখে পড়ে বড় বড় কয়েকটি কক্ষ, সোফাসজ্জিত ড্রইংরুম। পড়ার টেবিল, চেয়ার, শোয়ার ঘর, বিছানো খাট, বড় আলমারি, বুকসেলফ, আরাম কেদারা, স্নানের চৌবাচ্চা, বিশালাকার কমোড বিশিষ্ট বাথরুম। জানালা খুললে উপেনের দুই বিঘা জমি,
সেই তালগাছের স্থান। উত্তর থেকে দক্ষিণ দিক পর্যন্ত প্রশস্ত কাঠের ঝুলবারান্দা, সামনে চওড়া বারান্দায় আছে একটি বড় স্প্রিডবোর্ড, তিনতলার ছাদে উঠলে চোখে পড়ে পদ্মার চর, কখনও বা ঢেউয়ের খেলা। শুধু যা নেই তা হলো কবির পদচারণা, কোলাহলমুখর সেসব অতীত। পদ্মা-গড়াই-হিশনার শীতল স্রোতে প্লাবিত এই অঞ্চল।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন