বাংলার প্রাচীন রাজধানী সোনারগাঁ
। ঈশা খাঁর স্বপ্নের নগরী সোনারগাঁ। প্রাচীন গৌরবময় ও বৈচিত্রমন্ডিত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রাণকেন্দ্র সোনারগাঁ। সোনারগাঁও বাংলার মুসলিম শাসকদের অধীনে পূর্ববঙ্গের একটি প্রশাসনিক কেন্দ্র। এটি বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ জেলার একটি উপজেলা। এর অবস্থান ঢাকা থেকে ২৭ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে।শের শাহ প্রতিষ্ঠিত ঐতিহাসিক সিন্ধু-গ্র্যান্ডট্রাংক সড়ক বেয়ে ১ কিলোমিটার অভ্যান্তরে। গবেষকদের মতে,
সোনারগাঁয়ের প্রাচীন নাম ছিল সুবর্ণবীথি বা সুবর্ণগ্রাম। এ সুবর্ণগ্রাম থেকেই মুসলিম আমলে সোনারগাঁ নামের উদ্ভব। প্রবাদ আছে,
মহারাজ জয়ধ্বজ এর আমলে এই অঞ্চলে সুবর্ণ বৃষ্টি হয়েছে বলে এ স্থান সুবর্ণগ্রাম নামে পরিচিতি
লাভ করে। কেউ কেউ বলেন,
বার ভূঁইয়া প্রধান ঈশা খাঁর স্ত্রীর
সোনা বিবির নামানুসারে এর নাম হয়েছে সোনারগাঁয়ের পূর্বে মেঘনা নদী,
দক্ষিন-পশ্চিমে
শীতলক্ষ্যা,
দক্ষিনে ধলেশ্বরী এবং উত্তরে ব্রহ্মপূত্র
পরিবেষ্টিত থাকায় এলাকাটি খুব উন্নত ছিল। সেজন্য অনেক রাজা-বাদশা সানন্দে
সোনারগাঁকে বাংলার রাজধানীর রুপ দিয়েছিলেন।আনুমানিক ১২৮১ খ্রিস্টাব্দে সোনারগাঁয়ে মুসলিম আধিপত্যের সূচনা হয়। ১৩৩৮ খ্রিস্টাব্দে ফখরুদ্দিন মোবারক শাহ্ বাংলার পূর্বাঞ্চল সোনারগাঁকে স্বাধীন বলে ঘোষনা করেন এবং এটি পূর্ব বাংলার স্বতন্ত্র
রাজধানী হিসেবে প্রথম মর্যাদা লাভ করে। বার ভূঁইয়া প্রধান মসনদ-ই-আলা ঈসা খাঁর আমলে সোনারগাঁ
বাংলার রাজনৈতিক
পরিমন্ডলের খ্যাতির শীর্ষে আরোহন করে।এই সোনারগাঁয়ের মধ্য দিয়েই নির্মিত হয় ষোড়শ শতকে দিল্লীর শাসক শের শাহ্
প্রতিষ্ঠিত ঐতিহাসিক গ্র্যান্ডট্রাংক
রোড,
যা সিন্ধু থেকে শুরু হয়ে সোনারগাঁ এসে শেষ হয়। সোনারগাঁও লোকশিল্প জাদুঘর পানাম নগর-
এই এলাকাটি ১৯শ
শতকে সোনারগাঁওয়ের
উচ্চবিত্ত ব্যবসায়ীদের বাসস্থান ছিলো। এ নগরীতে আরো রয়েছে খাজাঞ্চিখানা,
ঠাকুর ঘর,
গুপ্তপথ,
মঠ,
মন্দির,
পুরনো লোক কারুশিল্প জাদুঘর ভবন,
পোদ্দার
বাড়ি,
৪০০ বছরের প্রাচীন টাকশাল বাড়ি,
বিনোদন
পিকনিক স্পট,
টুরিস্ট হোম এবং ১১১ বছরের প্রাচীন বিদ্যাপীঠ সোনারগাঁও জি আর ইনস্টিটিউশন।
সোনারগাঁ শুধু নৈসর্গিক সৌন্দর্যের দিক
দিয়েই নয় ধর্ম, সংস্কৃতি, শিল্পকলা এবং জ্ঞান-বিজ্ঞানেও প্রভূত উন্নতি সাধন করেছিল। এখানকার প্রাচীন মাজার,
মসজিদ ও স্থাপত্য নিদর্শনই এর যথার্থ প্রমাণ বহন করে। মধ্যযুগে সমাজ তথা
রাজনীতি ও অর্থনীতিতে সোনারগাঁ বিদেশী খ্যাতনামা পরিব্রাজক ও
ব্যবসায়ীর দৃষ্টি আকর্ষন করতে সক্ষম হয়েছিল। মধ্যযুগেও সোনারগাঁ ছিল একটি সমৃদ্ধ শহর। সোনারগাঁয়ে
প্রথমেই আপনি খোঁজ নেবেন, আবহমান
গ্রামবাংলার লোক সংস্কৃতির ধারাকে পুনরুজ্জীবন, সংরক্ষণ ও বিপণনের
জন্য গড়ে ওঠা বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন ভবনটি কোথায়। ১৯৭৫ সালের ১২
মার্চ শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন এই ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন। এখানে একটি জাদুঘর
রয়েছে। জাদুঘরের পাশেই রয়েছে শতবর্ষী অট্টালিকা। এটি বড় সর্দার
বাড়ি নামে খ্যাত। এই ভবনে রয়েছে ১০টি গ্যালারি। গ্যালারিগুলো কাঠ
খোদাই কারুশিল্প, পটচিত্র ও মুখোশ, আদিবাসী জীবনভিত্তিক নিদর্শন, গ্রামীণ লোক
জীবনের পরিবেশ, তামা কাসা পিতলের লোকজ বাদ্যযন্ত্র ও পোড়া মাটির নিদর্শন ইত্যাদি দিয়ে সাজানো। ভবনের পূর্বে রয়েছে লোকজ
স্থাপত্যকলায় সমৃদ্ধ জয়নুল আবেদীন স্মৃতি জাদুঘর। জাদুঘর ছাড়াও এখানে আছে
লাইব্রেরি, ডকুমেন্টেশন সেন্টার, ক্যান্টিন, সেমিনার হল,
ময়ুরপঙ্ক্ষী কারুমঞ্চ, গ্রামীণ উদ্যান, হরেক রকম বৃক্ষ, মনোরম লেক, লেকে ঘুরে বেড়ানোর জন্য নৌকা এবং শৌখিনদের মত্স্য শিকারের
ব্যবস্থা।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন